ঢাকা , শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ , ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফরিদপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০, বাড়িঘর ভাঙচুর পোরশায় সাংবাদিক এস এম হায়াত উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন পোরশায় বড় মাদ্রাসার অর্ধশত ছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ফরিদপুরে অবশেষে এনআইডি পেলেন দুই হাতহীন জসিম তিন মাসে ২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক নওগাঁয় ৩ জনের লাশ উদ্ধার সংবাদ সম্মেলন করে আইনি সহায়তা চাওয়ার চার দিনের মাথায় খুন আলামত নষ্টের অভিযোগে সাবেক ওসিসহ দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট বিজয়নগরে ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কূটনীতিকরা কার বাসায় বৈঠক করবে সেটা বিএনপি চিন্তা করে না- আমির খসরু লাল শাপলায় রঙিন বরিশালের উজিরপুরের জলাভূমি পল্লবী-নিউমার্কেটে বিভিন্ন অপরাধে ৩০ জন গ্রেফতার ৫ বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন এক্সেল লোড নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না পণ্যবাহী গাড়িচালকরা ৮ দাবিতে সোমবার বান্দরবানে সকাল সন্ধ্যা হরতাল মালিবাগে জুয়েলারি দোকান থেকে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি চাকরিতে বিরতির পর শ্রমশক্তি থেকে ছিটকে পড়ছে নারীরা সংসদে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব বাদ দেওয়ার পরামর্শ সিপিডির এইচএসসির ফল ১৬-১৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

অদক্ষ কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা

  • আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৭:৩৫:৩১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৭:৩৫:৩১ অপরাহ্ন
অদক্ষ কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা
সাত বছর ধরে এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৩৪০ জনের বেশি অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত কর্মীর জন্য প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির বোঝা টানছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিএল)। এস আলমের মাধ্যমে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের দায় মেটাতে গিয়ে ব্যাংকটি সঠিক পথে ফেরাতে বর্তমানে কঠিন সংগ্রাম করছে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে জানা গেছে, কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ছাড়াই কেবল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোরিকশা চালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী এবং রংমিস্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিকে এই বিশাল সংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার পেছনে বছরে ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হওয়ায় গত সাত বছরে ব্যাংকটির ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই বিশাল আর্থিক বোঝা এবং ব্যাংক থেকে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি লোপাট হওয়ার অভিযোগ-সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা মন্তব্য করেছেন, ইসলামী ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের কারণে পুরো ব্যাংকিং খাতই ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেকেই জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জালিয়াতির প্রমাণ মেলায় অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সার্টিফিকেট যাচাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কর্মকর্তাদের বিদ্রোহ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
সম্প্রতি সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যখন বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থাপনা তাদের পেশাগত দক্ষতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা আয়োজন করে। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা সেই পরীক্ষা বয়কট করেন, যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রকাশ করে। এই কর্মকর্তারা ব্যাংকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, সংবাদ সম্মেলন এবং বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এসব কার্যকলাপের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ভোরে ব্যাংকের ফেসবুক পেজও হ্যাক করা হয়, যার পেছনে ‘বাইরের লোকের’ ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রশাসক বসবে একীভূত হতে যাওয়া সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন পরিচালক এ বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব বিদ্রোহী কর্মীর হাতে গ্রাহকের টাকা নিরাপদ নয়। তাদের এই প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রমাণ করে যে ব্যাংকের ভল্ট বা ক্যাশ কাউন্টার তাদের কাছে কোনোভাবেই সুরক্ষিত নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যাংকটি ভয়ঙ্কর সংকটে পড়বে।
গ্রাহক সেবার মান তলানিতে
গত সাত বছরে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্যাংকটি কার্যত আঞ্চলিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীদের প্রাধান্য বেশি। এই কর্মীরা অফিসে সবসময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন এবং বারবার নির্দেশনার পরও নিজেদের পরিবর্তন করেননি। তাদের অদক্ষতা ও উদ্ধত আচরণে গ্রাহক সেবার মান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক ওই পরিচালক বলেন, ভাষা বুঝতে না পারা ও সেবার মান নিম্ন হওয়ায় গ্রাহক সেবায় ইসলামী ব্যাংকের যে সুনাম ছিল, তা তলানিতে চলে গেছে এবং গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশৃঙ্খলা
ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম-সমর্থিত পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশেরই পেশাগত দক্ষতা ছিল না। তারা এস আলমের ক্ষমতা দেখিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা মানতেন না এবং খেয়ালখুশি মতো চলতেন। নিজেদের পছন্দের চট্টগ্রাম অঞ্চল বা সুবিধাজনক জায়গায় বদলি করতে বাধ্য করতেন। যেসব ম্যানেজার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের নিয়মের মধ্যে আনতে চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের পোস্টিং বা চাকরি ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে পুরো ব্যবস্থাপনা, এমনকি জোনাল হেডরাও আতঙ্কে ছিল। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই কর্মকর্তারা এখনো এস আলমসহ আগের অবস্থানে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছেন।’ আমিনুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পটিয়ার অবৈধ ব্যাংকাররা চাকরি রক্ষার আন্দোলন করেন, কিন্তু আপনাদের ডাকাত সর্দার এস আলম ব্যাংক থেকে যে ১ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করেন না কেন?’
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স